জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার বলি হচ্ছে প্রকৃতির এক একটি উপাদান, বাংলাদেশের মতো জনসংখ্যার চাপে জর্জরিত একটি দেশের প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর অবস্থা আরো নাজুক । বাংলাদেশে ৯৯% মানুষ কোনো না কোনোভাবে খাবার পানি পেয়ে থাকে কিন্তু সেই পানি কতটুকু নিরাপদ?
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি ৬.১) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে। নিরাপদ পানি বলতে বোঝায় বাড়ির ভেতরে পানির সহজলভ্যতা, সার্বক্ষণিক পানি প্রাপ্তি এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেই পানি যেন জীবাণু ও ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে মুক্ত থাকে ।
অন্যদিকে ২০২৫ সালে প্রকাশিত ইউনিসেফ ডব্লিউএইচও জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রামের (JMP) তথ্যমতে, এখনো বাংলাদেশের প্রায় ৪০% মানুষ নিরাপদ খাবার পানি পায় না অপরদিকে গত এক দশকে নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা ও সরবরাহে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৩% । অর্থাৎ বাংলাদেশ এই গতিতে এগোতে থাকলে আমাদের লাগবে আরও প্রায় ৭৫ বছর অর্থাৎ ২১০০ সালেরও পরে গিয়ে আমরা হয়তো সবাইকে নিরাপদ পানি দিতে পারব। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে, ফলশ্রুতিতে সুপেয় পানির অভাব এখন সর্বত্র দেখা দেবে এছাড়াও রয়েছে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যার উর্ধ্বগতি ।
সবার জন্য পানি এবং সবার জন্য নিরাপদ পানি এক নয়। মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (২০০০–২০১৫) এই সময়কালে বাংলাদেশ প্রায় সর্বজনীন পানির সরবরাহ নিশ্চিত করেছে, কিন্তু পানির মান নিয়ে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ততটা অবগত নয় অর্থাৎ পানি পাচ্ছি তো খাচ্ছি কিন্তু সেই পানি কতটুকু নিরাপদ সে বিষয়ে আমাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। ফলত আর্সেনিক দূষণ, ই-কোলাই, কিংবা শহরের ওয়াসার দূষিত পানি আজও লাখো মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে ।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে নিরাপদ পানি প্রাপ্তির হার
ভারত অনেকটা এগিয়ে গেছে এখন তাদের ৭৬% মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে (এক দশক আগে ছিল ৬১%) । এছাড়া ভুটানেরও ৬৬% মানুষ নিরাপদ পানির আওতায় এসেছে। তবে পাকিস্তান খুব বেশি একটা এগোতে পারেনি তাদের নিরাপদ পানি প্রাপ্যতার হার মাত্র ৪৫%। আর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে ৫৯%-এ ।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল পার্থক্য তৈরি করছে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার । যেমন, ভারত “স্বচ্ছ ভারত” কর্মসূচিকে রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার বানিয়েছে । নেপালও টার্গেট দিয়েছে ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে ট্যাপের পানি পৌঁছে দেওয়ার। বাংলাদেশও খোলা স্থানে মলত্যাগ শূন্যে নামিয়ে এনেছিল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যা ছিল একটি বড় সাফল্য। কিন্তু নিরাপদ পানির প্রশ্নে সেইরকম প্রতিশ্রুতি এখনো দেখা যাচ্ছে না ।
নিরাপদ পানি নিশ্চিতে করণীয়
পানি সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি পানির মান নিশ্চিত করা। আর্সেনিক দূষিত এলাকায় বিকল্প নিরাপদ উৎস তৈরি করা। শহরের ওয়াসাকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং সেই সাথে রাজনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে নিরাপদ পানি জনগণের অধিকার হিসেবে ঘোষণা দেয়া এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
বাংলাদেশের সময় খুব কম। এসডিজির লক্ষ্য ২০৩০, কিন্তু বর্তমানের যে গতি এতে করে সেই লক্ষ্য অনেক দূরের স্বপ্ন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তবুও, যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে তাহলে দিনশেষে আমরা চাইলেই ভারতের মতো সাফল্য দেখাতে পারবো।
কারণ পানি শুধু কোন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বা উন্নয়নের সূচক নয়,পানি মানুষের মৌলিক অধিকার।
Share this:
- Post
- Click to print (Opens in new window) Print
- Click to email a link to a friend (Opens in new window) Email
- Click to share on Reddit (Opens in new window) Reddit
- Share on Tumblr
- Click to share on Telegram (Opens in new window) Telegram
- Click to share on Threads (Opens in new window) Threads
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window) WhatsApp
- Click to share on Mastodon (Opens in new window) Mastodon
- Click to share on Nextdoor (Opens in new window) Nextdoor
- Click to share on Bluesky (Opens in new window) Bluesky